লজ্জা তোমার বাড়ি কোথায়?
লজ্জা!
শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। দিনে বহুবার হয়তো এই শব্দটা নানা কথায় উচ্চারণ
করি। অভিযোগ করি- ‘অমুকের লজ্জা নাই’, ‘এটা লজ্জার বিষয়’, ‘লজ্জা
থাকা উচিত’, ‘আমি লজ্জিত’, আরো প্রচলিত
একটি কথা শুনি- ‘লজ্জা নারীর ভূষণ’। ‘লজ্জা না থাকলে সে মানুষ
পুরুষ নয়’, ‘পুরুষের লজ্জা থাকা উচিত নয়’ ‘এত লজ্জা রাখি কোথায়’ ইত্যাদি। তাছাড়া লজ্জার
নিজেরই লজ্জা পাবার ক্ষমতা আছে। লজ্জাই তাকে দেখে লজ্জা পায়
যে লজ্জাহীন কাজ করতে করতে দু’কান কাটা
হয়ে গেছে।
লজ্জাহীন
মানুষকে কটাক্ষ করে অনেকে বলে ‘এত লজ্জা রাখি কোথায়’, সমাজে যারা লজ্জা রাখার জায়গা পায়না দেখা যাবে তাদের ভিতরে অধিকাংশই
নির্লজ্জ। ‘পুরুষের লজ্জা থাকা উচিত নয়’, পুরুষকে দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করানোর জন্য অনেকে ওকথা বলে। ‘লজ্জা নারীর ভূষণ’- এ কথাও
আজ আসার পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ নারী লজ্জা কি তা জানেই না। তাছাড়া ‘অমুকের লজ্জা নাই’, এটা লজ্জার বিষয়’, ‘লজ্জা
থাকা উচিত’, ‘আমি লজ্জিত’- এইসব কথাগুলো যারা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করে দেখা যাবে তাদের অধিকাংশই নিজেই
লজ্জার কারণ। অর্থাৎ লজ্জা যখন মানুষ মুখে প্রকাশ করে চিৎকার
করবে তখন বুঝতে হবে এটা অপরকে কটাক্ষ করা ও প্রতিহিংসার ভাষা
হিসেবে তারা ব্যবহার করছে। ‘লজ্জা পেয়েছি’ এটা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করার বিষয় নয় বরং তার
আচার-আচরণ এবং মুখভঙ্গি, চোখের চাউনিতে বিষয়টি ফুটে উঠবে। কিন্তু আজকাল আমরা লজ্জা পাই না বলেই লজ্জা শব্দটা বেশি উচ্চারণ করি।
তাই তো আমার লজ্জার
কাছে জানতে ইচ্ছে করে- লজ্জা তোমার বাড়ি কোথায়? লজ্জার বাড়ি দেহে, মনে, অঙ্গে-অঙ্গে। লজ্জা সে তো সবার কাছে আছে। থাকার পরেও লজ্জা পায় এমন কে আছে! সবাই তো লজ্জাকে পাপিষ্ট করে নিজেকে পাপিষ্ঠ করতেও দ্বিধা করে না। লজ্জার প্রকৃত
সংজ্ঞাটা কি? ‘মানুষ কি মনে করবে’, ‘মানুষের
সামনে ছোট হয়ে যাব’, অথবা ‘আমি ভালো
সেটা প্রমাণ করব’ তার জন্য জনসম্মুখে কোনো লজ্জাজনক কাজ
করলেন না, সেটাই কি শুধু লজ্জা? নাকি মানুষ হিসেবে আপনার মনুষত্ববোধ ও বিবেকের কাছে লজ্জিত হন বলেই লজ্জাজনক
কাজ আপনি গোপনেও
করেন না? মনে রাখা উচিত এই দুই দিক বিবেচনায়ই
কিন্তু মানুষ লজ্জা পায়। তবে আপনি কোনটি ধারণ করেন?
লজ্জার
কাজগুলো কি কি? যেমন পোশাক পরেও যাদের দেহ দেখা যায় ও বোঝা যায়, তাদের দিকে তাকানো ও দেখা, অশ্লীল ছবি সিনেমা তৈরী ও দর্শন,
গোপন
পাপ হস্তমৈথুন ও
পর্নোগ্রাফি, গোপন প্রেম-পরকীয়া, বিবাহবহির্ভূত যাবতীয় যৌনাচার, যৌন সহিংসতা, এসবই অশ্লীলতার
মাপকাঠিতে সবচেয়ে উপরে রয়েছে। এরপরে নানা পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয়
পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত অনৈতিক ও অপরাধমূলক যাবতীয় কাজ
স্পষ্টত নির্লজ্জতার বহিঃপ্রকাশ। সর্বোপরি কুরআন-হাদিস নির্দেশিত যাবতীয় নীতি-নৈতিকতা পরিপন্থী কাজসমূহ হলো লজ্জাজনক। এসব
কাজকে ‘না’ বলা ও এড়িয়ে চলা হলে একমাত্র
তিনিই লজ্জাশীলতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ। আর
একমাত্র গরু-ছাগল ও কুকুর-শুকরের মতো প্রাণির লজ্জা থাকার কথা নয়, কারণ তারা পশু। তবে মানুষ পশু নামক প্রাণি নয়। তাই লজ্জা
মানুষকে শালীন পোষাকে আবৃত করে, ঘরে নেয়, এই লজ্জা মানুষকে দিয়ে জানালা-দরজা আটকায়।
‘আপনি যা করছেন, ‘আপনি যা
বলছেন’ তা অন্য কোন
মানুষের কাছে লজ্জাজনক না-ও হতে পারে যদি সে আপনার মতোই
নির্লজ্জ হয়ে থাকে। কেননা যার লজ্জা নেই সে আপনার লজ্জাহীনতা বুঝবে
না। যেমন ধরুন- বিবাহবহির্ভূত যেকোনো প্রকার অশ্লীল যৌনতা
গোপনে সংঘটিত হয় দুজনের মধ্যে, এখানে দুই ব্যক্তিই লজ্জাহীন। তাই একজনকে
আরেকজনের কাছে লজ্জা পেতে হয় না। ঠিক তেমনি যখন অশ্লীলতা কেউ দর্শন করে তখন সেই অশ্লীল উপাদান ও ব্যক্তি উভয়ই লজ্জাহীন। ঠিক এভাবে লজ্জাহীনের সাথে বেশি
নির্লজ্জতার পরিচয় দেয় মানুষ। আর বড় বিস্ময়ের কথা হলো স্বয়ং
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে তার বান্দা নির্লজ্জতার পরিচয় দেয়। কিন্তু আল্লাহ
লজ্জাশীল, তিনি লজ্জাশীলতাকে পছন্দ করেন। লজ্জাশীল সত্তার সামনে নির্লজ্জ কাজ করা গুরুতর অপরাধ ও আরো বড় লজ্জার কারণ। তার পরেও
আল্লাহর বান্দারা তাঁর সামনেই কিভাবে লজ্জাজনক কাজ করে চলছে! আল্লাহর দেওয়া জীবন বিধান
ইসলামও লজ্জাশীলতাকে তার প্রধান মৌল নীতিতে পরিণত করেছে। অর্থাৎ লজ্জা নেই তো ইসলাম নেই।
সব
ক্ষেত্রেই প্রতিটা মানুষ মুখোশ পরে থাকে। নিজেকে খুব লাজুক
ভাবে উপস্থাপন করে। প্রমাণ করে লজ্জাজনক কোন কাজই সে করতে পারে না, করে না। এমনকি জনসম্মুখে কেউ নিজেকে নির্লজ্জ
প্রমাণ করতে চায় না বরং লজ্জাশীল প্রমাণ করে বাহবাহ কুড়িয়ে নেয়। লজ্জাশীল ও নির্লজ্জ সবাই তাকে সমানভাবে করতালি দেয়।
আবার কোন লজ্জার মুখোশধারী নির্লজ্জ ব্যক্তির সম্মুখেও মানুষ নিজেকে লজ্জাশীল প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
যদিও উভয়ে উভয়কে সন্দেহের চোখে দেখে ও মুচকি হেসে বলে- ‘তুই তো আমার মতই নির্লজ্জ’। অন্যদিকে সত্যিকার লজ্জাশীল ব্যক্তির সম্মুখে প্রতিটা মানুষের প্রাণপণ চেষ্টা থাকে
নিজেকে লজ্জাশীল প্রমাণ করার। নির্লজ্জ ব্যক্তি অপর লজ্জাশীল ব্যক্তিকে সবসময়
হিংসা করে। যদিও এমন সব চেষ্টা মানুষের সহজাত
বৈশিষ্ট্য। তারপরও কোন বিবেকবান মানুষ যদি নিজের মুখোশের ভেতরে ও বাহিরে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তাহলে দেখবে সে নিজেকেই বারবার প্রতারিত
করছে বহু গোপন পাপের মাধ্যমে। মানুষের কাছে নিজেকে লজ্জাশীল প্রমাণ করছে, অন্যদিকে গোপন পাপে লিপ্ত থেকে সে নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। এ
কেমন মহাবৈপরিত্য!
কিন্তু
আপনার সৃষ্টিকর্তা যিনি আল্লাহ তিনি কিন্তু আপনার করা ও বলা সব কথা ও কাজের হিসাব
রাখছেন। তিনি দেখছেনও, আল্লাহ বলেছেন, “সে কি জানে না যে
আল্লাহ তাকে দেখছেন?” (সূরা আলাক্ব: ১৪)।
তিনি বড় সাক্ষী। লজ্জা তো সেক্ষেত্রও থাকতে হবে। আর আপনার গোপন লজ্জাহীনতার আরো সাক্ষী আছে। সত্যিই আছে।
আল্লাহ বলেছেন- ‘আজ আমরা তাদের মুখে মোহর এঁটে দিব। আর তাদের হাত
আমাদের সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দিবে’ (সূরা ইয়াসীন: ৬৫)। সেদিন কি করবেন? আর যদি লজ্জা নিয়ে মানুষকে ভয় পান কিন্তু যদি আল্লাহকে
ভয় না পান, তাহলে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়।
এই ঘাটতির জায়গা থেকেই মানুষ গোপনে লজ্জাহীনতার পরিচয় দেয়। সব অপকর্ম মানুষ
রাতের অন্ধকারে, ঘরের অন্দরমহলে, নানা জায়গায় দিন দুপুরে লুকিয়ে লুকিয়ে করছে। মনে করছে অপর মানুষ দেখছে না ও অপ্রকাশিত থাকবে। যার সাথে লজ্জাহীন কাজ করা হচ্ছে শুধু সে-ই দেখছে। তাহলে লজ্জা পাওয়ার প্রয়োজন হলো না। কিন্তু না!
আপনি
নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেন, মসজিদে যান নামাজ পড়তে, আপনার মধ্যে এ কেমন মহাবৈপরীত্য। বলুন তো আপনাকে কেনো নির্লজ্জ বলবো না? আল্লাহর নবীর হাদিসও আপনাকে নির্লজ্জ বলে আখ্যা
দেয়। আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘ঊদ (রা.) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহকে যথাযথ লজ্জা কর। রাবী বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছা.)! আমরা অবশ্যই আল্লাহকে লজ্জা করি, আলহামদুলিল্লাহ। তিনি বলেন, এটা নয়। বরং আল্লাহকে যথাযথ লজ্জা করতে হবে। অর্থাৎ তুমি তোমার মাথাকে ও উহা যা স্মরণ রাখে
তাকে হেফাযত করবে। পেট ও উহার অভ্যন্তরীণ বিষয়কে হেফাযত করবে। মৃত্যু ও পরীক্ষাকে
স্মরণ করবে। আর যে আখিরাতের আশায় দুনিয়ার সৌন্দর্য ত্যাগ করে, সেই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে লজ্জা করে’ (ছহীহ আত-তারগীব: ২৬৩৮)। অর্থাৎ
দুনিয়ার যত অবৈধ ও অশ্লীল চাকচিক্য সব যদি আমরা পরিহার করতে
না পারি তাহলে আল্লাহকে লজ্জা করতে পারলাম না। “আল্লাহকে অনুরূপ লজ্জা কর যেমন কোন লোক যথাযোগ্য স্বজন থেকে লজ্জা করে” (ইবন রজব, জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম, তাহক্বীক্ব: শু‘আইব আল-আরনাউত ও ইবরাহীম বাজিস, ১ম
খন্ড সঊদী আরব: দারাতুল মালিক আব্দুল আযীয, ৯ম প্রকাশ,
১৪২৩/২০০২ খ্রীঃ, পৃঃ ৫০১)। “তুমি আল্লাহকে ঠিক সেইরূপ লজ্জা করবে, যেইরূপ লজ্জা করে থাক তোমার সম্প্রদায়ের নেক লোককে” (সিলসিলাহ
ছহীহাহ হা/৭৪১)। আমরা তো বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশী
ও নেক লোকেদের লজ্জা করি। কিন্তু তার কিঞ্চিৎ পরিমাণও কি
লজ্জা আল্লাহকে করি?
সাহাবী যায়েদ ইবনু তালহা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ছা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দ্বীনের একটি
বিশেষ স্বভাব আছে। আর দ্বীন ইসলামের বিশেষ স্বভাব হ’ল লজ্জাশীলতা’। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মুত্তয়াত্তা মালিক, বায়হাক্বী, ইবনু মাজাহ, ছহীহ
আত-তারগীব, হা/২৬৩২; মিশকাত হা/৫০৯০।) রাসূল ছা. ঘোষণা দিয়ে গেছেন যে ইসলামের বিশেষ
বৈশিষ্ট্য হলো লজ্জাশীলতা। অন্যান্য দ্বীন থেকে তা তাকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। হে
মুসলিম ভাই ও বোনেরা, যে ইসলাম লজ্জাশীলতার ভিত্তির উপর
দাঁড়িয়ে, আপনি মুসলিম হয়েও কিভাবে সেই লজ্জাকে বারংবার
হত্যা করছেন? পৃথিবীর আর কোন ধর্মে লজ্জা নিয়ে কোন বাক্য
আছে বলে আমি জানিনা। আপনি মুসলমান হয়েও যদি সেই লজ্জার সংজ্ঞাটা আজ অব্দি বুঝতে
না পারেন তাহলে নিজেকে অন্তত ধার্মিক বলে দাবি করতে পারেন না। এমনকি প্রস্তুত
থাকুন আপনার এই নির্লজ্জ আচরণ আপনাকে দিনে দিনে ইসলাম থেকে বের করে দিচ্ছে।
লজ্জা নাই তো ধর্ম নাই!
আবু
সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ছা.) পবিত্র পর্দাশীল কুমারী মেয়েদের চেয়েও অধিক লাজুক
ছিলেন। কোন বিষয় তাঁর দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় হলে তাঁর চেহারা
দেখেই আমরা তা (তাঁর অসন্তুষ্টি) আঁচ করে নিতাম”। (বুখারী, মুসলিম, রিয়াযুছ
ছালেহীন, হা/৬৮৪)। আর আমাদের লজ্জা তো
নেই-ই, আমরা বরং নির্লজ্জের মত কাজকর্ম
করতেই বুঝি বেশি পছন্দ করি। অথচ আল্লাহর
নবীর চেহারায় ফুটে উঠতো অপছন্দনীয় সব কাজের প্রতি তার লজ্জার বহিঃপ্রকাশ। মুখে
তাকে বলে কয়ে বেড়াতে হতো না আপনার আমার মত। আনাস (রা.) হতে
বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন,
‘নির্লজ্জতা কোন জিনিসের মধ্যে থাকলে তাকে ত্রুটিপূর্ণ করে। আর
লাজুকতা কোন জিনিসের মধ্যে থাকলে তার শ্রী বৃদ্ধি করে’। (ছহীহ
আত-তারগীব: ২৬৩৫।) আপনি যতই মুখোশের
আড়ালে যান না কেন আপনার কাজে-কর্মে ও কথায় যদি গোপন নির্লজ্জতাও থেকে থাকে তাহলে সে কাজটি ত্রুটিপূর্ণ হবেই
হবে। তাহলেই ধরে নিব কোথাও না কোথাও নির্লজ্জ ভুল আপনি
করছেন। আর যদি সত্যিই মুখোশের ভেতরে বাইরে আপনার লজ্জাশীলতাই থেকে থাকে তাহলে
আপনার সেই কাজটি সুন্দর হবে। এমনিতেই মানুষ বুঝে নিবে এখানে লজ্জার স্পর্শ আছে, মানে সত্য-সুন্দর নীতি আছে।
ইবনু
ওমর (রা.) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী
করীম (ছা.) বলেছেন, ‘লজ্জা ও ঈমান
অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সুতরাং এর একটি তুলে নেয়া হলে অপরটিও তুলে নেয়া হয়’।
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রা.)-এর এক বর্ণনায় আছে ‘যখন উভয়ের
কোন একটিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়, তখন অপরটিও তার পশ্চাতে অনুগমন
করে’। (বায়হাক্বী, হাকিম, ছহীহ আত-তারগীব, হা/২৬৩৬; মিশকাত
হা/৫০৯৩)। আপনার যদি লজ্জা না থাকে তাহলেই
আপনি কোরআন-হাদিস ভুলে যান, নামাজ পরিত্যাগ করেন, অন্যায়-অবিচার ও দূর্নীতি
জড়ান, অবৈধ অশ্লীল সম্পর্কে জড়ান, আপনজনের
প্রতি দায়িত্বশীল হন না, অশ্লীলতার একনিষ্ঠ দর্শক হন। তাহলে আপনার ঈমান নেই এটাই প্রমাণিত সত্য।
নির্লজ্জতা আপনার ঈমান কেড়ে নিয়েছে। কেননা এ দুটি তো
একসাথে থাকতে পারে না।
আজ
পুরো পৃথিবী লজ্জার সংকটে পড়েছে। বাহ্যিক দৃশ্যমান এই পৃথিবীতে আরেকটি অদৃশ্য
পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে সেটা হল ভার্চুয়াল জগত বা ইন্টারনেট। সেখানে মানুষ
খায়, ঘুমায়, সাজগোজ করে, কথা বলে, আড্ডা দেয়, এমনকি
যৌনাচারেও লিপ্ত হয়। অধিকাংশ মানুষ আজ
ইন্টারনেটের যৌনতায় উন্মত্ত। এমনকি ইন্টারনেট যৌনতার কারণে বাহ্যিক পৃথিবীতে তারা
দাম্পত্য জীবনের প্রবেশের চেষ্টাও থামিয়ে দিয়েছে। আমাদের ঘরবাড়িতে জানালা আছে, দরজা আছে, কিন্তু অবাক হবার বিষয় হলো ইন্টারনেট
জগতে জানালা-দরজা নেই। অথচ মানুষ
সেখানে সবকিছু করছে, আর সবাই তা চেয়ে চেয়ে দেখছে। মানুষের
লজ্জার বেশিরভাগ খেয়ে ফেলেছে এই ইন্টারনেট। তবে চাইলেই এই ইন্টারনেটকে আমরা
লজ্জার ঘাতক হিসেবে তৈরি না করলেও পারতাম। সে ক্ষমতাও প্রতিটি ব্যক্তির এককভাবে
আছে। তবে ইন্টারনেটে ইবলিশ শয়তানের চলাচল বেশি হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ নিজের লজ্জা
ধরে রাখতে অসফল হচ্ছে। কিন্তু কেনো?
মানুষ
কেউই কোনোভাবেই লজ্জাশীল হতে পারেনা যদি না সে কতগুলো কাজ না করে। যেমন বিয়ে
না করে। এও জানি আমাদের সমাজ বাস্তবতায় বিয়ে করা অনেক সময় লজ্জার হয়ে পড়ে।
যেমন মা-বাবার বিয়ে দিতে বিলম্ব করা,
বিয়ের জন্য উপযুক্ত আর্থসামাজিক পরিবেশ তৈরি না হওয়া,
উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীর সন্ধানে বিলম্ব। এইতো বিয়ের পথে বাধাসমূহ।
কিন্তু একজন মানুষের জীবনের দেহ ও মন কিন্তু এত সব কিছু বোঝেনা। তারা প্রতিনিয়তই
যৌনকর্মে জড়াতে চাচ্ছে। তাদের সেই খোরাক জোগাতে সব বাধা পেরিয়ে বিয়ের পথে পা
রাখতে চেষ্টা করতে হবে। সেই চেষ্টায় যতই লজ্জা আসুক, লজ্জা পেলে হবেনা। এই জায়গায়ও প্রয়োজনে যুবকদের নির্লজ্জ হতে হবে। কেননা এই নির্লজ্জতার মাধ্যমে বিয়ে করা গেলে বহু
অবৈধ যৌনাচারের মতো লজ্জাহীন কাজ থেকে একজন মানুষ বিরত থাকতে পারে। আর যে ব্যক্তি সুযোগ থাকার পরেও নিজেই বিয়ে করতে
বিলম্ব করছে ও একই সাথে অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত, তার মধ্যে কোন প্রকারের লজ্জা নেই। সে লজ্জাকে মাটি চাপা দিয়েছে। এমনকি বিয়ে
করলেও বহু মানুষ নির্লজ্জতার খোলস থেকে বের হয়ে আসতে পারে না একটা কারণে, সেটি হলো দাম্পত্য সঙ্গীকে একমাত্র যৌন ক্ষুধা মেটানোর বাহক হিসাবে প্রস্তুত করতে না পারা। বিয়ের
মাধ্যমে লজ্জাশীলতায় প্রবেশ করেও বহু কারণে লজ্জাছাড়া হয়ে যাচ্ছে তারা। বিয়ের পরেও লজ্জাহীন হলে বিয়ে করে লাভ হবে
কি?
লজ্জা
যখন থাকে না তখনই মানুষ নিজের বিবেকের কাছে হেরে যায়। শুধুমাত্র এই যৌনাচারেই বহু
লোক পরাজিত হয়ে জীবনের কাছে দেহ-মনটাকে বোঝা করে ফেলেছে। তারা কখনো জিততে পাারবে বলে মনে হয় না। আর যাতে কেউ হেরে না যায় তাই
যাবতীয় অবৈধ যৌনাচারকে বৈধরূপ দিতে চেষ্টা করেছি এ লেখনীর মাধ্যমে। আমরা পারি না
বলতে- যৌনকর্ম ভালো নয়। এর চেয়ে ভালো কাজ আর দুনিয়ায় হয় কি করে? সেই এক ভালো যখন ভালো পথেই অর্জন হয়, তখন মানুষ হয় পরিশিলিত এক
জীবনের অধিকারী। আর এই কাজে যারা তৃপ্ত ও পবিত্র তারাই লজ্জাশীলতার মাপকাঠিতে
উত্তীর্ণ। তারা জয়ীও হয়েছে এ দুনিয়ায়। এমনকি পরকালেও তারা স্বর্গ লাভের
দাবিদার। আর তার
জন্য প্রয়োজন- বিয়ে ও বৈধ যৌনতার লজ্জা!
বলতে
পারেন একদিকে লজ্জা দিয়ে অনেক কথা বললাম, অন্যদিকে নির্লজ্জের মত যৌনতা নিয়ে অনেক
লেখা লিখলাম। চারপাশে সবার ভিতরে লজ্জা হারিয়ে গেছে এজন্য
আমি আমার লজ্জাকে স্থগিত করেছি লজ্জা দিয়ে আপনার নির্লজ্জতাকে ধ্বংস করার জন্য। দেখুন একমাত্র স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে অবাধ যৌন
সম্পর্ক তৈরী করতে না পারলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেউই
অশ্লীলতা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন না। আর একমাত্র দাম্পত্য
জীবনে একান্ত ক্ষণে লজ্জা না থাকাই ভালো। মু‘আবিয়া বিন হায়দাহ
আল-কুশায়রী (রা.) একবার রাসূলুল্লাহ (ছা.) কে বলেন- হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের এমন কিছু
লজ্জার বিষয় রয়েছে যা আমরা করি এবং যা আমরা ছাড়ি না। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, তুমি তোমার লজ্জাস্থানের হেফাযত কর। তবে তোমার স্ত্রী অথবা দাসী ব্যতীত”। অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে লজ্জা থাকবে এই একটি জায়গা ব্যতীত। আর তা হলেই অর্জন করা যাবে সকল ক্ষেত্রে লজ্জা। বাইরে কোথাও লজ্জাহীন হতে হবে না। মুখোশের বাইরে গিয়ে
লোকেদের কাছে প্রমাণ করতে হবে না লজ্জাশীলতা।
লজ্জাকে নিয়ে কথা
বলা শেষ। কিন্তু এবার আমি হবো নির্লজ্জ। পাতায় পাতায় আমি নির্লজ্জ হবো। আমার এ বইয়ে
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো লজ্জা দিয়ে লজ্জা রক্ষা করবো। দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ ও
এরপর অবারিত যৌনতার মাধ্যমে আমাদের জীবন ও লজ্জা রক্ষা করাই আমার সব কথার মূল উদ্দেশ্য।
আর তখনই আমরা লজ্জার বাড়ি খুঁজে পাবো!
এই লেখাটির উৎস বই: ব্যক্তিক যৌননীতি
লেখক: মুহাম্মাদ আল-আমিন খান
প্রকাশক: সনেট লাইব্রেরি
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla Sex Tips এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla Sex Tips এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Sex Tips