বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা
বিয়ের
আগে রক্ত পরীক্ষা না করে কোনোভাবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসা যাবে না। পাত্র বা পাত্রী
পেলেই আবেগের বশে বিয়ে করতে তাড়াহুড়ো করবেন না। সুন্দর পাত্র বা পাত্রী পেলে
বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যায় অনেকেই। তখন আর মেডিকেল চেকআপের বিষয়টি
মাথায় থাকে না। রক্ত পরীক্ষা না করে উভয় পক্ষের মধ্যে কোনো প্রকার কথা বার্তা ও
আন্তরিকতার সূচনা যেনো না হয়। বিয়ের সাথে যৌন সম্পর্কের এমন সম্পর্ক যা অস্বীকার
করা যায় না তাই মেডিকেল চেকআপ ছাড়া কোন প্রকার বিয়ে হতে পারে না। হলে হয়তো
দুজনের কেউ একজন মরণঘাতী ভাইরাস বহন করছেন, অন্যজন সম্পূর্ণ
সুস্থ হয়েও ভাগ্যবিড়ম্বনায় পড়ে গেছেন। অপরদিকে নিরপরাধ ও অবুঝ শিশু সন্তান যার
এ পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার ছিলো তাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেওয়া হলো। তাই সাবধান,
ভুল যেন না হয়! তাছাড়া বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে নেওয়ার বড়
উপকার কোথায় জানেন? কোন রোগব্যাধি না
থাকলে নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যৌন মিলন করতে ও সঙ্গীকে
ভালবাসতে আন্তরিক করে।
শুধু
বিয়েতেই সব হয় না। বিয়ের পরে যদি একজন অপরজনের দ্বারা জটিল কঠিন মরণব্যাধি বা
নিরাময় অযোগ্য নানা সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যান তাহলে চলমান দাম্পত্য
জীবনের সুখ বলতে কিছুই থাকবে না। তেমনি ভবিষ্যৎ অন্ধকারে
পতিত হবে। তাই সম্পর্কে জড়ানোর আগে মেডিকেল চেকআপের কোন বিকল্প আছে বলে মনে করি
না। আজকাল মানুষ সচেতন হচ্ছে। বিয়ের আগে মেডিকেল চেকআপ
বাধ্যতামূলকভাবে করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও গ্রামীণ মধ্যবিত্ত
সমাজগুলোতে মেডিকেল চেকআপের বিষয়ে ঘোরতর আপত্তি থাকে। আজকাল
ঘরে ঘরে নানা জটিল কঠিন সংক্রামক ব্যাধি রয়েছে। তাই শুধু উপরের সৌন্দর্য দেখেই
বিয়ের পথে পা বাড়াবেন না বরং গভীরে প্রবেশ করে দেখুন। আর পাত্র পাত্রী কোন এক
পক্ষের হয়তো রক্ত পরীক্ষার ব্যাপারে ভয় থাকতে পারে, যদি
কিছু ধরা পড়ে তাহলে বিয়ে হবে না। তারা পরীক্ষায় না গিয়ে বিয়ের পথে এগোতে
চাইতে পারেন। অপরপক্ষ তাদের এই সিদ্ধান্ত আন্তরিকতা ও ভদ্রতার সাথে প্রত্যাখ্যান
করে রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দিন।
বৈবাহিক
কিংবা অবৈবাহিক—যে কোনো শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে কিছু সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে, যেগুলো
যৌনবাহিত রোগ (Sexually Transmitted Diseases—STDs) বা
যৌনবাহিত সংক্রমণ (Sexually Transmitted Infections—STIs) নামে
পরিচিত। এখানে প্রধান যেসব রোগ শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, সেগুলো আলোচনা করা হলো:
১. এইচআইভি/এইডস
(HIV/AIDS)
- কীভাবে ছড়ায়: আক্রান্ত
ব্যক্তির রক্ত, বীর্য, যোনির তরল বা অন্যান্য শরীর
নিঃসৃত তরলের মাধ্যমে।
- প্রভাব: শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে, ফলে সহজেই অন্যান্য সংক্রমণে আক্রান্ত
হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
- প্রতিরোধ: নিরাপদ যৌন
আচরণ, নিয়মিত পরীক্ষা, কনডম ব্যবহার, প্রি-এক্সপোজার প্রফিল্যাক্সিস (PrEP)।
২. সিফিলিস
(Syphilis)
- কীভাবে ছড়ায়: চামড়ায়
ক্ষত থাকলে বা যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমে।
- প্রভাব: প্রাথমিক
পর্যায়ে ফুসকুড়ি, ক্ষত; পরে মস্তিষ্ক, স্নায়ুতন্ত্র ও হৃদযন্ত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
- প্রতিরোধ: সঙ্গীর
স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কনডম ব্যবহারের মাধ্যমে।
৩. গনোরিয়া
(Gonorrhea)
- কীভাবে ছড়ায়: যৌন
সংস্পর্শের মাধ্যমে।
- প্রভাব: প্রস্রাবে
জ্বালা, যৌনাঙ্গ থেকে পুঁজ নিঃসরণ, বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি।
- প্রতিরোধ: নিরাপদ যৌন
আচরণ ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
৪. ক্ল্যামাইডিয়া
(Chlamydia)
- কীভাবে ছড়ায়: সংক্রমিত
সঙ্গীর সঙ্গে যৌন মিলনের ফলে।
- প্রভাব: প্রস্রাবে ব্যথা, জনন
অঙ্গের প্রদাহ, বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি।
- প্রতিরোধ: নিয়মিত
স্ক্রিনিং ও কনডম ব্যবহার।
৫. হেপাটাইটিস
বি ও সি (Hepatitis B and C)
- কীভাবে ছড়ায়: আক্রান্ত
ব্যক্তির রক্ত বা দেহ তরলের সংস্পর্শে আসলে।
- প্রভাব: যকৃতের ক্ষতি, যকৃত
ক্যান্সারের ঝুঁকি।
- প্রতিরোধ: হেপাটাইটিস
বি-এর টিকা গ্রহণ, কনডম ব্যবহার।
৬. হিউম্যান
প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV)
- কীভাবে ছড়ায়: ত্বকের
সংস্পর্শ, যৌন সংস্পর্শ।
- প্রভাব: জরায়ু
ক্যান্সারসহ বিভিন্ন অঙ্গের ক্যান্সারের ঝুঁকি, যৌনাঙ্গে ফুসকুড়ি বা
ওয়ার্ট।
- প্রতিরোধ: HPV টিকা
গ্রহণ, নিরাপদ যৌন আচরণ।
৭. হারপিস
সিমপ্লেক্স ভাইরাস (Herpes Simplex Virus—HSV)
- কীভাবে ছড়ায়: যৌন
সংস্পর্শ বা মুখের সংস্পর্শের মাধ্যমে।
- প্রভাব: যৌনাঙ্গে
ফুসকুড়ি, ব্যথা ও চুলকানি।
- প্রতিরোধ: HSV আক্রান্ত
সঙ্গীর সঙ্গে সরাসরি যৌন সংস্পর্শ এড়ানো, কনডম
ব্যবহার।
৮. ট্রাইকোমোনিয়াসিস
(Trichomoniasis)
- কীভাবে ছড়ায়: পরজীবী
সংক্রমণের মাধ্যমে যৌন মিলনের সময়।
- প্রভাব: দুর্গন্ধযুক্ত
স্রাব, যৌনাঙ্গে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া।
- প্রতিরোধ: নিয়মিত
পরীক্ষা, সঠিক চিকিৎসা।
৯. ক্যানডিডিয়াসিস
(Candidiasis)
- কীভাবে ছড়ায়: কখনো
কখনো যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমে, যদিও এটি প্রকৃত যৌনবাহিত রোগ নয়।
- প্রভাব: যোনিতে সাদা
স্রাব, চুলকানি, জ্বালা।
- প্রতিরোধ: স্বাস্থ্যকর
অভ্যাস, সংক্রমণ হলে চিকিৎসা গ্রহণ।
তবে এর
বাইরেও কিছু অতিরিক্ত বা কম পরিচিত সংক্রমণ রয়েছে, যেগুলো শারীরিক সম্পর্কের
মাধ্যমে ছড়াতে পারে। নিচে সেগুলোরও ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
১. মাইকোপ্লাজমা
জেনিটালিয়াম (Mycoplasma genitalium)
- এটি একটি ব্যাকটেরিয়া
সংক্রমণ, যা যৌনসম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়।
- অনেক ক্ষেত্রেই
লক্ষণবিহীন থাকে।
- প্রস্রাবে ব্যথা, জনন
অঙ্গে প্রদাহ তৈরি করতে পারে।
২. লিম্ফোগ্রানুলোমা ভেনেরিয়াম (LGV)
- ক্ল্যামাইডিয়ার একটি
আলাদা স্ট্রেইন দ্বারা সৃষ্ট।
- যৌনাঙ্গ, মলদ্বার
ও লিম্ফ নোডে সংক্রমণ ঘটায়।
- প্রধানত পুরুষ সমকামীদের
মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে হেটেরোসেক্সুয়াল সম্পর্কেও ছড়াতে পারে।
৩. গ্রানুলোমা
ইনগুইনেল (Granuloma Inguinale বা Donavanosis)
- বিরল একটি যৌনবাহিত
ব্যাকটেরিয়াল রোগ।
- যৌনাঙ্গে ব্যথাহীন ঘা
তৈরি করে, যা ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয়।
- নির্ণয় কঠিন, কিন্তু
চিকিৎসাযোগ্য।
৪. মোলাসকাম
কন্টাজিওসাম (Molluscum Contagiosum)
- ভাইরাসজনিত ত্বকের
সংক্রমণ।
- যৌনসংস্পর্শ ছাড়াও
আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি চামড়ার সংস্পর্শে ছড়াতে পারে।
- যৌনাঙ্গে ছোট ছোট
ফুসকুড়ি তৈরি হয়।
৫. হেপাটাইটিস
এ (Hepatitis
A)
- সাধারণত দূষিত খাবার ও
পানির মাধ্যমে ছড়ালেও, মল-মুখ সংযোগ (Oral-Anal Contact) বা
নির্দিষ্ট ধরনের যৌন আচরণের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
৬. Shigella Infection
(Shigellosis)
- এটি মল-মুখ সংস্পর্শের
মাধ্যমে ছড়াতে পারে, বিশেষত পুরুষ সমকামীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
- ডায়রিয়া, পেট
ব্যথা ও জ্বরের মতো উপসর্গ হয়।
৭. Herpes Simplex Virus Type 1
(HSV-1)
- HSV-1 সাধারণত
ঠোঁটে ফোসকা বা জ্বরঠোসা তৈরি করে (oral herpes)।
- তবে ওরাল সেক্সের
মাধ্যমে HSV-1
যৌনাঙ্গেও ছড়াতে পারে।
৮. ব্যাকটেরিয়াল
ভ্যাজাইনোসিস (Bacterial Vaginosis)
- যদিও এটি সরাসরি
যৌনবাহিত রোগ নয়, তবে যৌনসম্পর্ক এর ঝুঁকি বাড়ায়।
- যৌনসঙ্গীর পরিবর্তন বা
ঘন ঘন শারীরিক সম্পর্ক এর একটি কারণ হতে পারে।
৯. ক্যানডিডা
ও অন্যান্য ছত্রাকজনিত সংক্রমণ (Yeast Infections)
- প্রাথমিকভাবে যৌনবাহিত
নয়, তবে যৌনসম্পর্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- স্ক্যাবিস (Scabies)
- পিউবিক
লাইস (Pubic Lice)
- মোলাসকাম কন্টাজিওসাম (Molluscum Contagiosum)
তাছাড়া যৌনসম্পর্কের মাধ্যমে নতুন বা অপ্রচলিত সংক্রমণও ছড়াতে পারে। তাই নিরাপদ
যৌনচর্চা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সঠিক
সঙ্গী নির্বাচন এবং সচেতনতা বজায় রাখাই সর্বোত্তম প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সর্বোপরি
রক্ত পরীক্ষা ও অন্যান্য শারিরীক চেকআপ ছাড়া কাউকে বিয়ে বা কোনো প্রকার যৌন সম্পর্ক
করবেন না।
বিয়ের
আগে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের
জন্য স্বাস্থ্যকর একটি জীবন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য
পরীক্ষা অবশ্যই করানো উচিত। নিচে বিয়ের আগে করনীয় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য
পরীক্ষাগুলোর বিবরণ দেওয়া হলো:
১. রক্তের
গ্রুপ ও আরএইচ ফ্যাক্টর পরীক্ষা
- কেন প্রয়োজন: স্বামী-স্ত্রীর
রক্তের গ্রুপ ও Rh ফ্যাক্টর জানা খুবই জরুরি। স্ত্রী Rh-negative ও স্বামী Rh-positive হলে ভবিষ্যতে সন্তান
ধারণে সমস্যা বা জটিলতা দেখা দিতে পারে (Rh incompatibility)। সেই অনুযায়ী
চিকিৎসকের পরামর্শে আগেভাগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
২. থ্যালাসেমিয়া
পরীক্ষা
- কেন প্রয়োজন: দুজনই
থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে ভবিষ্যৎ সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার
ঝুঁকি থাকে। এটি রক্তের জেনেটিক সমস্যা, তাই বিয়ের আগেই দুজনের এই টেস্ট করিয়ে
নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
৩. এইচআইভি
(HIV) পরীক্ষা
- কেন প্রয়োজন: এইডস রোগ
সৃষ্টিকারী এই ভাইরাস দাম্পত্য সম্পর্কে সংক্রমিত হতে পারে। বিয়ের আগে
এইচআইভি টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
৪. হেপাটাইটিস
বি এবং হেপাটাইটিস সি টেস্ট
- কেন প্রয়োজন: হেপাটাইটিস বি
ও সি ভাইরাস লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে
ছড়াতে পারে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত থাকলে চিকিৎসা নেওয়া এবং সঙ্গীকে রক্ষা করা
সম্ভব হয়।
৫. সিফিলিস
পরীক্ষা (VDRL / RPR Test)
- কেন প্রয়োজন: সিফিলিস একটি
যৌনবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। সময়মতো শনাক্ত না হলে এটি মারাত্মক
স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
৬. ডায়াবেটিস
এবং উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা
- কেন প্রয়োজন: ডায়াবেটিস ও
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে গর্ভকালীন সময়ে বা দাম্পত্য জীবনে শারীরিক জটিলতা দেখা
দিতে পারে। আগেভাগে নির্ণয় করে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন।
- Blood Sugar & Lipid
Profile: ডায়াবেটিস বা রক্তে চর্বির অতিরিক্ততা থাকলে যৌন সক্ষমতায়
প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলোও মূল্যায়ন করা দরকার।
৭. জেনেটিক/হার্ডিটারি
রোগের পরীক্ষা
- কেন প্রয়োজন: কোনো পারিবারিক
জেনেটিক রোগের ইতিহাস থাকলে সেগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং টেস্ট করানো
উচিত।
৮. STD/STI টেস্ট
(যৌনবাহিত রোগের পরীক্ষা)
- কেন প্রয়োজন: গনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া,
হারপিস, HPV, ট্রাইকোমোনিয়াসিস ইত্যাদি
সংক্রমণের পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ভবিষ্যৎ জীবনে সঙ্গী বা
সন্তানকে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যায়।
৯. ফার্টিলিটি/উর্বরতা
পরীক্ষা (প্রয়োজনে)
- কেন প্রয়োজন: কারও সন্তান
ধারণে সমস্যা থাকার আশঙ্কা থাকলে (স্বাস্থ্যগত বা পারিবারিক ইতিহাস অনুযায়ী)
প্রাথমিক ফার্টিলিটি পরীক্ষা করিয়ে জানা যেতে পারে।
১০.
মেন্টাল হেলথ ও কাউন্সেলিং
- কেন প্রয়োজন: বিয়ের আগে
মানসিক প্রস্তুতি এবং পরস্পরের মানসিক সুস্থতা ও পরিপক্কতা যাচাইও অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং নেওয়া যেতে পারে। নারীদের যৌন
স্বাভাবিকতা নির্ণয়ে মানসিক মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরামর্শ ও থেরাপি
নিতে হয়। মানসিক উদ্বেগ, বিষণ্ণতা বা দাম্পত্য অস্বস্তি যৌন
দুর্বলতার অন্যতম কারণ হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মূল্যায়ন
গুরুত্বপূর্ণ।
১১. হরমোন পরীক্ষা
- Testosterone Level
Test: টেস্টোস্টেরনের স্বল্পতা থাকলে যৌন ইচ্ছা (libido), উত্থান (erection) ইত্যাদিতে সমস্যা হতে পারে।
- Prolactin Test: উচ্চ
প্রোল্যাকটিন মাত্রা যৌন দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে।
- FSH এবং LH
Test: শুক্রাণু উৎপাদন ও হরমোন ভারসাম্য নির্ণয়ে প্রয়োজন।
- Hormone Profile (FSH,
LH, Estrogen, Prolactin): মেয়েদের হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকলে
যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে বা যোনি শুষ্কতার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১২. Semen
Analysis (বীর্য পরীক্ষাঃ)
- সন্তানের জন্য সক্ষম
কিনা যাচাইয়ের জন্য বীর্যে শুক্রাণুর গুণমান ও পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
১৩. Pelvic Examination / Vaginal Ultrasound/ Penile Doppler Ultrasound
- গাইনিকলজিক্যাল কোনো
শারীরিক সমস্যা (যেমন: ইনফেকশন, ফাইব্রয়েড, এন্ডোমেট্রিওসিস)
আছে কিনা দেখতে গাইনি পরীক্ষা করা হয়।
- লিঙ্গে রক্তপ্রবাহ যথাযথ
হচ্ছে কিনা তা মূল্যায়নের জন্য এই আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হয়। ইরেকটাইল
ডিসফাংশনের কারণ নির্ণয়ে এটি সহায়ক।
১৪. NPT
(Nocturnal Penile Tumescence) Test
- রাতে স্বাভাবিক লিঙ্গ
উত্থানের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। মানসিক বা শারীরিক সমস্যার পার্থক্য বোঝার
জন্য এই টেস্ট কার্যকর।
এইচআইভি/এইডস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV), হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস, হেপাটাইটিস বি ও সি- অন্তত এই রোগগুলো নিরাময়
অযোগ্য এবং আপনার মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। এই রোগগুলো বৈবাহিক সম্পর্কের
মাধ্যমে দ্রুত সঙ্গীর দেহে ছড়িয়ে পড়বে। আর এগুলো কেবলমাত্র রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে
নিশ্চিত হওয়া যায় যে কারো মধ্যে রয়েছে কিনা। বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুধু
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্যই নয়, বরং ভবিষ্যৎ
প্রজন্মের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর জন্য অপরিহার্য। তাই সচেতন ও দায়িত্বশীল দম্পতির
উচিত বিয়ের আগে উল্লিখিত টেস্টগুলো করিয়ে নেওয়া। সকল টেস্ট করানো সম্ভব না হলেও
অন্তত মরণঘাতী এবং নিরাময় অযোগ্য কোনো রোগ-ব্যাধি সঙ্গীর দেহে আছে কিনা তা অবশ্যই অবশ্যই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে।
তবে শুধু কোনো টেস্ট দিয়ে ‘আপনি যৌনভাবে সক্ষম কি না’ বলা সম্ভব নয়। শারীরিক, মানসিক, ও হরমোনগত মূল্যায়নের সমন্বয়ের মাধ্যমে যৌন সক্ষমতা নির্ণয় করা হয়। যদি
যৌন সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ থাকে, তবে Sexual Health
Specialist, Urologist, বা Andrologist চিকিৎসকের
শরণাপন্ন হওয়া সবচেয়ে ভালো। কারণ, গোপন সমস্যা গোপন রাখলে তা
দীর্ঘমেয়াদে বড় সংকটে পরিণত হতে পারে।
এমন সব
সংক্রামক রোগ যা দাম্পত্য সঙ্গম ও রক্তের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী থেকে তাদের পরবর্তী
বংশধরদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এইসব জানা থাকলে কেউ গোপন করবেন না। এটা নৈতিক
দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। তারপরও অনেকে হয়তো এ রোগগুলো
সম্পর্কে অবগত নয় বা কেউ হয়তো বিয়ে ভেঙে যাবে বিধায় গোপন করে থাকে। অপরপক্ষকে
নিজের ও বিপরীত পক্ষের পাত্র বা পাত্রীর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে
তারা উভয়ই এ বিয়েতে জড়াতে পারেন কিনা। রক্ত পরীক্ষা ও
অন্যান্য মেডিকেল পরীক্ষার মাধ্যমে যদি জানা যায় পাত্র-পাত্রী কারো মধ্যে কোন
সংক্রামক ব্যাধির উপস্থিতি আছে তাহলে এ বিয়ে ভেঙে দিতে হবে।
মন খারাপ করলে চলবে না। বরং এর মাধ্যমে জানা গেল রোগের খবর যাতে উপযুক্ত চিকিৎসার
মাধ্যমে সুস্থ জীবন লাভ সম্ভব হবে। বিয়ের আগে রোগ নির্ণয় ও সুস্থতার জন্য অবিবাহিতরাও মেডিকেল
চেকআপের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত থাকুন।
এই লেখাটির উৎস বই: ব্যক্তিক যৌননীতি
লেখক: মুহাম্মাদ আল-আমিন খান
প্রকাশক: সনেট লাইব্রেরি
সার্চ কী: বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা, বিয়ের আগে ব্লাড টেস্ট, বিয়ের আগে করণীয় রক্ত
পরীক্ষা, বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া টেস্ট, বিয়ের আগে এইচআইভি
টেস্ট, বিয়ের আগে হেপাটাইটিস টেস্ট, বিয়ের
আগে রক্তের গ্রুপ মিল, বিয়ের আগে ব্লাড গ্রুপ টেস্ট, বিয়ের আগে রক্তের রোগ পরীক্ষা, বিয়ের আগে স্বাস্থ্য
সচেতনতা, বিয়ের আগে জেনেটিক পরীক্ষা, বিয়ের
আগে STD টেস্ট, বিয়ের আগে যৌনরোগ
পরীক্ষা, বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা প্রয়োজনীয়তা,
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার গুরুত্ব, বিয়ের
আগে করণীয় স্বাস্থ্য টেস্ট, কেন বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করা
জরুরি, বিয়ের আগে স্বাস্থ্য সচেতন দম্পতি, বিয়ের আগে রক্তের টেস্টের তালিকা, বিয়ের আগে দম্পতির
স্বাস্থ্য পরীক্ষা গাইড।
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla
Sex Tips এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে
সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো
লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক
শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের
কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায়
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla
Sex Tips এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও
লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা
ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে
করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ
আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Sex Tips