বহুবিবাহ ও এর বৈধতা
বহুবিবাহ
দুভাবে হয়। পুরুষের একই সাথে একাধিক স্ত্রী রাখা, যেটা একজন
নারীর জন্য সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি মেডিকেল
সাইন্সের দিক থেকেও একজন নারীর একাধিক স্বামী রাখা ক্ষতিকর।
কারণ একাধিক পুরুষের সাথে সহবাসের ফলে গর্ভধারণ হলে সন্তানের পরিচয় নির্ধারণ করার
ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হবে। পাশাপাশি একাধিক পুরুষের সাথে মিলিত হওয়ার ফলে বহু বীর্য একই গর্ভাশয়ে পতিত হলে
দুরারোগ্য নানা ব্যাধি সৃষ্টি হবে। কঠিন মরণঘাতী যৌন রোগ
ছড়িয়ে পড়বে স্ত্রী ও তার একাধিক স্বামীদের মধ্যে। এ
কারণেই হয়তো যার স্বামী মারা যায় সে নির্দিষ্ট সময়কাল অতিক্রম না করে আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না যা পবিত্র্র কুরআন দ্বারা বিধিবদ্ধ। আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে
মারা যায়, তারা (স্ত্রীগণ) নিজেরা চার মাস দশ দিন অপেক্ষায়
থাকবে। অতঃপর যখন তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করবে, তখন
যথাবিধি নিজেদের জন্য যা করবে তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই। আর তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক খবর রাখেন” (সূত্র: সূরা বাকারা ২৩৪)। এ সময়ের
মধ্যে পূর্বের স্বামী দ্বারা গর্ভধারণ হলে সেটা স্পষ্ট হয়
অথবা মাসিক ঋতুস্রাব হয়ে গেলে পূর্বের স্বামীর শুক্রাণু তার ভেতরে থাকে না।
অন্যদিকে একজন পুরুষের বারবার বিয়ে করার কারণ স্ত্রীর সাথে তালাক হয়ে যাওয়া বা স্ত্রীর মৃত্যু
হওয়া। ঠিক একই কারণ নারীদের বার বার বিয়ের
পেছনে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে নারীর স্বামী একই সময়ে একজনই থাকে।
তবে
আজকের আলোচ্য বিষয় হলো একাধিক স্ত্রী ও একজন স্বামী। বাংলাদেশের আইন ও ইসলামী
শরীয়ত কোনোটিই একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী রাখার বিরুদ্ধে নয়।
যখন একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করে তাদের ঠিকমতো ভরণপোষণ দিতে পারবে না, তাদের সমভাবে জৈবিক অধিকার দিতে পারবে না,
সন্তানাদি প্রতিপালনের খরচ দিতে পারবে না, সর্বোপরি প্রেম
ভালবাসা ও দায়িত্বশীলতার জায়গায় ঘাটতি রাখবে বা তফাৎ সৃষ্টি করবে তখন একজন
পুরুষ আইন, ধর্ম, সামাজিক ও মানবিক
দৃষ্টিকোণ থেকেই অন্যায় করবেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “আর যদি তোমাদের এ আশঙ্কা থাকে, যে তোমরা এতিম
(মহিলা)-দের সাথে ন্যায় বিচার করতে পারবে না, তাহলে সাধারণ
নারীদের মাঝ থেকে তোমাদের যাঁদের ভাল লাগে, তাঁদের দুইজন,
তিনজন কিংবা চারজনকে বিয়ে করে নাও। কিন্তু যদি তোমাদের এই ভয় হয়,
যে তোমরা ন্যায় বিচার করতে পারবে না, তাহলে
তোমাদের জন্য একজনই যথেষ্ট। কিংবা যে তোমাদের ডান হাতের অধিকারভূক্ত; তাঁকেই যথেষ্ট মনে করে নাও। সীমালঙ্ঘন থেকে বেঁচে থাকার জন্য এটাই হচ্ছে
সহজতর পন্থা”। উক্ত আয়াতের প্রথমে আল্লাহ যা বুঝাতে
চেয়েছেন তা হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত নিচের হাদিসের মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়। হাদীছটি হলো- “হে
ভাগ্নে! এক ইয়াতীম বালিকা এমন একজন অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে ছিল, যে তার সম্পদ ও রূপের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। সে তাকে যথোচিতের চেয়ে কম মাহর
দিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছা করে। তখন লোকদেরকে নিষেধ করা হলো ঐসব ইয়াতীমদের বিয়ে
করার ব্যাপারে। তবে যদি তারা সুবিচার করে ও পূর্ণ মাহর আদায় করে (তাহলে বিয়ে
করতে পারবে)। (অন্যথায়) তাদের বাদ দিয়ে অন্য নারীদের বিয়ে করার আদেশ করা হলো
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৬৪)। উক্ত আয়াতের প্রথম দিকের ব্যাখ্যা এ হাদিস দ্বারা
সুস্পষ্ট হল। ইয়াতিম নারীদের ব্যাপারে আল্লাহ কত সুন্দর নির্দেশনা দিয়েছেন, সুবহানাআল্লাহ।
উক্ত আয়াতের মাাঝে আল্লাহ সুস্পষ্ট ভাবে বলেছেন, যদি ভয় হয় যে আমরা
ন্যায় বিচার করতে পারবে না তাহলে একজন স্ত্রীকেই অধিকারভুক্ত রাখবে। এটা আল্লাহর সুস্পষ্ট পরামর্শ। একই সাথে একাধিক
স্ত্রীর ভরণপোষণ দেওয়া, সংসার চালানো অনেকের পক্ষে সম্ভব
নয়। তাদের জন্য পৃথক আবাসস্থল করে দেওয়া, একাধিক স্ত্রীর বহু সন্তানের লালন পালন থেকে শুরু করে তাদের উপযুক্ত
মানুষ করা, এ সব কিছুই ব্যাপক খরচ ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাছাড়া
একাধিক স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন চালিয়ে যাওয়াও খুব কম সংখ্যক পুরুষের জন্য সম্ভব। সাার্বিক
বিচারে পূর্ণ সক্ষম না হলে একাধিক স্ত্রী রাখা ভুল। আর আয়াতের শেষ ব্যাখ্যা হলো- ওহুদ যুদ্ধের পর অনেক নারী বিধবা ও এতিম হয়ে যান। তারা যেন একটা আশ্রয়
পায় সেজন্য এ আয়াতে ডান হাতের অধিকারভুক্ত বলতে আল্লাহ দাসীদের ইঙ্গিত করেছেন।
আগের কালে যখন দাস প্রথা চালু ছিল তখন দাসীরা মনিবের পূর্ণ অধিকারভুক্ত ছিল। আজ কালকের মত কাজের মেয়েদের মত নয়। কাজেই দাসিদের
বিয়ে করা আর না করা সমান। দাসিদের অন্য কেউ
বিয়ে করেনা মনিব মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত। তাই দাসী মনিবের বউ এর মতই। এজন্য তখনকার সময়ে
দাসীর সাথে বউয়ের মত মিলিত হওয়া যেত। আর যুদ্ধবন্দী এসব স্বামীহারাদের বিয়ে না করলে তাদের অবস্থা করুণ হবে। তার প্রেক্ষিতেও একের অধিক বিয়ের নির্দেশনা ছিল।
যেসব
কারণে পুরুষ মানুষ বহু স্ত্রী গ্রহণ করে থাকে- দয়া করে, অর্থ ব্যয় করার খাত হিসেবে, সম্পর্ক বাড়ানো, আত্মীয়তার সম্পর্ক
বাড়ানো, অনেক মানুষের সাথে থাকার
অভিপ্রায়, সামাজিক অবস্থান তৈরি ও
রাজনৈতিক কারণেও। তাছাড়া যুদ্ধ ও দাস প্রথা এগুলো বহু স্ত্রী গ্রহণ করার
অন্যতম কারণ। জৈবিক চাহিদাও রয়েছে। তবে আল্লাহ পুরুষ মানুষের জৈবিক চাহিদাকে শুধু অগ্রাধিকার
দিয়ে দুই তিন অথবা চারটি বিয়ে করার কথা বলেননি। স্বাভাবিক
অবস্থায় একজন পুরুষের যৌন চাহিদা ও অন্যান্য জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য একজন নারীই যথেষ্ট। অর্থাৎ পুরুষের বহুবিবাহের
অনেক কারণ ইঙ্গিত করে আল্লাহ এ আয়াত নাজিল করেছেন বলে মনে হয়। তবে কেউ চাইলে জৈবিক
কারণে একাধিক বিয়ে করতে পারেন। তবে এই একটি মাত্র কারণকে একাধিক বিয়ের পেছনে
দাঁড় করানোর কোন সুযোগ নেই। এর চেয়ে বরং অন্যান্য কারণগুলো
অধিকতর শক্তিশালী। বিভিন্ন জনে বিভিন্নভাবে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করে থাকেন। ভুল
ব্যাখ্যার কারণে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে যে মুসলমান পুরুষেরা একে একে চারটি বিয়ে
করতে পারে। কিন্তু কোন প্রেক্ষিতে সেটা পারে সে বিষয়টা সুস্পষ্ট করা হয় না।
তবে সব
বউয়ের সাথে সমান আচরণ অনেকের পক্ষেই করা সম্ভব না। শুধু টাকা থাকলেই
হবে না। টাকা দিলেন বাড়ি দিলেন খাওয়া দিলেন, একই সময়ে একাধিক বউয়ের সাথে থাকবেন কিভাবে?
একজনকে যখন সময় দিবেন,
অন্যজন
যদি আপনাকে প্রত্যাশা করে। তাহলে কোনদিক রেখে কোনদিকে যাবেন? কাজেই সমব্যবহার করা কঠিন। আবার সব বউকে কি সমান পছন্দ করতে
পারবেন? এই জন্য একাধিক বিয়ে সাধারণ কারো পক্ষে করা উচিত
নয়। তবে নিষেধ বলছি না। “কিন্তু যদি
তোমাদের এই ভয় হয়, যে তোমরা ন্যায় বিচার করতে পারবে না,
তাহলে তোমাদের জন্য একজনই যথেষ্ট। কিংবা যে তোমাদের ডান হাতের
অধিকারভূক্ত; তাঁকেই যথেষ্ট মনে করে নাও। সীমালঙ্ঘন থেকে
বেঁচে থাকার জন্য এটাই হচ্ছে সহজতর পন্থা”। বলছি যে, এখানে আল্লাহ সুস্পষ্ট করেছেন মুসলিমদের জন্য একজন মাত্র স্ত্রী গ্রহণই
স্বাভাবিক অবস্থায় উত্তম। সীমালঙ্ঘন থেকে বেঁচে থাকার জন্য এটি সবচেয়ে উত্তম
পন্থা। আমরা একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করে সীমা লঙ্ঘন করে ফেলতে পারি সে ইঙ্গিতও আল্লাহ
দিয়েছেন। কাজেই এতো সহজ হবে না একের অধিক বিয়ে করার ইচ্ছা পূরণ প্রক্রিয়া।
পুরুষেরা
আমাদের সমাজে মূলত স্ত্রীকে না জানিয়ে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এর হার অনেক বেশি। স্বামীর বিয়ের খবর জানাজানি হলে
অশান্তি তৈরি হয়। তখন দুই স্ত্রীকে দুই জায়গায় রাখা হয়
অথবা পাশাপাশি রাখা হলে তাদের মধ্যে কোন বনিবনা হয় না। দেখা
যাচ্ছে পুরুষ দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথেই সংসার করছে, প্রথম
স্ত্রী সন্তানাদিদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। হয়তো স্বামীর বসতভিটায় সে রয়েছে, স্বামী খরচ
পাতি দিচ্ছে না। হয়তো সে তার বড় সন্তানাদিদের কামাই দ্বারা চলছে অথবা নিজে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে অতি কষ্টের জীবন অতিবাহিত
করছেন। না হয়তো তার বাপ-ভাইয়ের
আশ্রয় আছেন। পুরুষের দ্বিতীয় বা একাধিক বিবাহের বেলায় প্রথম স্ত্রীর ভাগ্যে
এমনটি ঘটতে দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন দ্বিতীয় বিবাহের
কথা গোপন রাখা হয় ও অন্যত্র দ্বিতীয় সংসার তৈরী করা হয়, ফলে প্রথম সংসারের
কেউ তা টের পায় না। আবার প্রথম স্ত্রীকে কোনোরূপ নির্যাতন করা না হলেও শারীরিক নির্যাতনের অজুহাতে স্বামীর বিরুদ্ধে
মামলা করা হয় শুধুমাত্র দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে।
স্ত্রীকে জানালে স্বামী কখনোই সম্মতি পাবে না এজন্যই হয়তো গোপনে বিয়ে করে।
পুরুষের এ ধরনের বিয়ের বেলায় দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রেম-পরকীয়ার মত সম্পর্কও থাকে।
এর
বাইরে আমাদের সমাজে খুব অল্প হলেও স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে দ্বিতীয় বিবাহের ঘটনা
ঘটছে। স্ত্রী অসুস্থ হলে অনেক সময় স্বেচ্ছায় স্বামীকে অনুমতি দেন। অসুস্থ নয়
অথচ স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন এমন স্ত্রী খুঁজে পাওয়া
দুষ্কর। তবে হাতে গোনা কয়েকজন আছেন। এসব ক্ষেত্রে পুরুষেরা
তাদের স্ত্রীকে ভালো কথা দিয়ে নানা ছলে
বুঝিয়ে রাজি করিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তারপরও কোন
স্ত্রী সম্পূর্ণভাবে মন থেকে স্বামীকে বিয়ে করায় না। শেষমেশ সম্মতি দিলেও তার ভিতরে অনেক কষ্ট থেকে যায়। স্বামীর ভাগ কেউ দিতে পারে
না। মোটকথা দ্বিতীয় বিয়ে করতে হলে প্রথম স্ত্রীকে ভীষণ
আঘাত দিয়েই করতে হবে। কেউই স্বেচ্ছায়
স্বামীকে বিয়ে করতে অনুমতি দেয় না সে
অসুস্থ হোক অথবা স্বামীর ইচ্ছা পূরণের জন্য হোক। আবার স্বামী গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করলেও তা একজন স্ত্রীর জন্য চরম বেদনা ও হতাশাব্যঞ্জক। এটাই
চরম সত্য।
তারপরও
স্ত্রীকে কোন মতে রাজি করাতে পারলে, স্বামীর অর্থ সম্পদ যথেষ্ট থাকলে, সমভাবে ভরণপোষণ দিতে পারলে, পুরুষ শারীরিকভাবে যথেষ্ট
শক্তিশালী হলে, উভয় স্ত্রীর যৌন চাহিদা নিয়মমাফিক যথাসময়ে
মেটাতে পারলে একজন পুরুষের জন্য একাধিক বিবাহ কোন কঠিন বিষয়
নয়। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু
করে নিম্নবিত্ত সব সমাজে এমন কিছু পুরুষ রয়েছে যার একাধিক স্ত্রী রয়েছে। তাদের
মধ্যে অনেকেই একই সাথে একই ছাদের নিচে বসবাস করছেন। এমনকি স্ত্রীরা মিলেমিশে ঘর
সংসার করছে। এ দৃশ্য আমরা খবর ও
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পাই। যদি কোন পুরুষ মনে করে তার
দ্বিতীয় বিয়ে করা প্রয়োজন বা মন ছুটে যেয়ে থাকে তাহলে সে প্রথম স্ত্রীকে রাজি
করাবেন। তার সম্মতি নিয়ে তাকে সাথে নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করবেন। দ্বিতীয়
স্ত্রীকেও গ্রহণ করার আগে ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে যে তারা মিলেমিশে থাকতে
পারবে কিনা। যদি তা সম্ভব হয় তাহলে আমি মনে করি না যে এটা কোন পুরুষের জন্য ভুল
সিদ্ধান্ত। জীবন যেহেতু একটাই। তাই কোন পুরুষ চাইলে ও একই সাথে তার সার্বিক
সামর্থ্য থাকলে দ্বিতীয় বিয়ে করবেন। এ ব্যাপারে আমি সম্মতি
দিচ্ছি।
তবে
পুরুষের উচিত সন্তানাদি ছোট থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করা। বড় হলে তারা
আপত্তি জানাবে। তারা বাবার দ্বিতীয় বিয়ে কিছুতেই মেনে নিতে
চাইবে না। কেননা সন্তানেরা কখনো চায়
না মা-বাবার মধ্যে কোন প্রকার বিভক্তি আসুক। তাদের মা কষ্টে থাকুক। তারা ভাই বোন মা বাবা মিলেমিশে
একক সংসার থাকবে। এখানে কোন প্রকার বিভাজন সন্তানেরা চায় না।
বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলে সন্তানেরা খুবই কষ্ট পাবে, বাবার উপর ভুল ধারণা নিয়ে জীবন পার করবে। বড় হলে হয়তো বুঝবে যদি বাবার
দ্বিতীয় বিয়ের যৌক্তিক কোনো কারণ থাকে। যদি ছোটবেলায় বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে
তাহলে সেটা দেখতে দেখতে তারা এক পর্যায়ে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
ঘরে নতুন মায়ের মত কেউ আসলে তারা তাকে সম্মান ও ভালোবাসা দিতে শিখবে। সেও যদি বড়
স্ত্রীর সন্তানাদিদের নিজের সন্তানের মত ভালবাসতে জানে তাহলে
বোধহয় মিলেমিশে থাকতে আর কোন বাধা থাকে না। অপরদিকে ছোট
বউয়ের সন্তানাদিদের বড় মা নিজের সন্তানদের মতো ভালোবাসলে
উভয় পক্ষের ভাই-বোনেরা আপন হয়ে থাকলে শান্তি ও সম্পীতি আনয়ন সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে পিতার অর্থাৎ স্ত্রীদের স্বামীর যথেষ্ট কৌশলী ভূমিকা যেমন
রাখতে হবে তেমনি তাকে আর্থিকভাবে ও যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে হবে। তা না হলে পরিবার সামলানো কঠিন হয়ে যাবে। ফলে
নানামুখী অশান্তির প্রবেশ ঘটবে।
মেয়েদেরকে
বলব- যৌক্তিক অবস্থান থেকে আপনারা স্বামীর দ্বিতীয়
বিয়ে মেনে নিবেন। বিয়ে না করে যদি আপনার স্বামী প্রেম পরকীয়া করে, পর নারী নিয়ে ঘুরতে যায়, যৌনকর্ম
করতে হোটেলে যায়, গোপনে গোপনে এসব করে
বেড়ায় তাহলে আপনি কি করবেন? করছে তো অনেকে।
আজকাল ঘরে ঘরে পুরুষেরা স্ত্রী থাকার পরও পর্নোগ্রাফি ও
হস্তমৈথুন এডিক্টেড। দ্বিতীয় স্ত্রী থাকলে বোধহয় এসব নেশা
কেটে যাবে। অনেক নারী জানেও না বোঝেও না যে তার স্বামীর
মধ্যে এই ধরনের স্বভাব আছে। তার থেকে বরং স্বামীকে বিয়ে দিন। আর যাদের মধ্যে পরকীয়া
প্রবণতা রয়েছে তাদের বিয়ে না দিলে তারা ঝুঁকিতে রয়েছে,
আপনার সম্পর্কও ঝুঁকিতে। অনেক সংসারে তো স্বামীর পরকীয়ার
সূত্র ধরে ধরে অশান্তি হয়। স্ত্রীকে মারধর
করে ও ভরোনপোষণ দেয় না। পরকীয়া বা পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট
হওয়া থেকে স্বামীকে বাঁচাতে স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় বিয়ের
অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। বহু পুরুষ ঘরের একক স্ত্রীতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে
দ্বিতীয় নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক করতে যায়। বিষয়টা যেমন
পুরুষের জন্য মারাত্মক গুনাহের তেমনি এর প্রভাব স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে ওপর পড়ে। তার চেয়ে বরং
স্বামীকে দ্বিতীয় বিবাহ করালে নেতিবাচক প্রভাব অতটা প্রথম স্ত্রীর উপর পড়বে না
যতটা স্বামী পরকীয়াগ্রস্ত হলে পড়তো। এ অবস্থা থেকে ফিরিয়ে
আনার জন্য চেষ্টার সব করবেন। কিন্তু যদি না পারেন তাহলে
অশান্তির মধ্যে না থেকে বরং স্বামীকে শান্তিতে থাকতে বিয়ের
অনুমতি দিন। আর স্বামীর সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে তার স্ত্রী পরিচয়ে সন্তানাদিদের নিয়ে বেঁচে থাকুন। নিজেই স্বামীকে
বিয়ে করিয়ে একই ছাদের নিচে সবাই মিলে থাকুন। এটা খুব একটা কঠিন বিষয় নয়। শুধু প্রয়োজন স্বামীর প্রতি নিজের
সর্বোচ্চ সেক্রিফাইস করার মনোভাব।
তাছাড়া
কুরআন ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষকে যে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের ছাড় দিয়েছে সেটা পুরুষের
মন-মানসিকতা ও আচরণের সাথে শতভাগ সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রতিটি নারীর সেটা বোঝা উচিত।
স্বামীকে যে দ্বিতীয় বিবাহ সব ক্ষেত্রে দিতে হবে সেটা বলছি না বরং যে পুরুষের
মধ্যে দ্বিতীয় বিয়ের প্রবণতা লক্ষণীয় তাদেরকে স্ত্রীরা অনুমতি দিতে পারেন। আর সমাজ এ নিয়ে আজকাল আর কিছু
মনে করবে না। কারণ সমাজ দেখে ফেলেছে তার অশ্লীলতা ও অস্থিরতার করুণ
পরিণতি কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। যদি একজন পুরুষ বহু স্ত্রী নিয়ে সুখে সংসার
করতে পারে তাহলে এ সমাজই তার প্রশংসা করবে। তবে কেউ যদি সীমালংঘন করে চারিদিকে স্ত্রী রাখতে
চায় তাহলে সেটা ধর্ম ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধ বিবেচিত হয়। এমন পুরুষ এক ঘরে হয়ে যাবেন। তবে অশ্লীলতা ও বিবাহ
পরবর্তী প্রেম পরকীয়া প্রতিরোধের জন্য এ যুগে মনে হয় একাধিক স্ত্রী গ্রহণের
বিকল্প কিছু নেই। এজন্যই এতো কথা বলা।
তাছাড়া পুরুষদের উচিত এক নারীতেই সন্তুষ্ট থাকা। কেননা দৈহিক চাহিদা এমন একটা বিষয় যেটা সাময়িক সময়ের। বয়স বাড়তে থাকলে একটা সময় চাহিদা ও শক্তি থাকবে না। অল্পবয়স্কা স্ত্রীদের সেটা প্রয়োজন হলে তারা দিশেহারা হয়ে যাবে। তাছাড়া একাধিক স্ত্রীর ভরণপোষণ তাদের সন্তানাদি মিলিয়ে বিশাল পরিবার পরিচালনা একজন মানুষের পক্ষে আর্থসামাজিক দিক দিয়ে অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। বৃদ্ধকালে বহু ঝামেলায় পড়তে পারেন এমন পুরুষ। কোন স্ত্রী স্বামীর খেদমত করবেন, সে কোন ঘরে থাকবেন সন্তানরাও সেটা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে যান। দেখা গেছে অনেক সন্তান অনেক স্ত্রী থাকার পরও ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে, জানাযায় শেষ বিদায় দিতেও কেউ আসেনি। আর যদি তার অর্থ সম্পদ দালানকোঠা আত্যাধিক মাত্রায় থেকে থাকে তাহলে প্রথম স্ত্রীকে রাজি করিয়ে কোন পুরুষ চাইলে বিয়ে করতে পারেন। তবে প্রথম স্ত্রী যার সাথে বিশ্বাস ভালোবাসার অকৃত্রিম বন্ধন রয়েছে তাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের পথে পা না বাড়ানো উচিত। এতে করে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে ও তার সংসারে আপনার যে সন্তান রয়েছে তারা হতাশার মধ্যে পড়ে যাবে। তার চেয়ে বরং একক সংসারে নিজেকে মানিয়ে নিন। স্ত্রীর সাথে সব রকম শারীরিক মানসিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। একজন পুরুষের জন্য একজন স্ত্রীই যথেষ্ট। সুস্থ চিন্তাধারার পুরুষের দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রয়োজন হয় না। তাই মাথা থেকে দ্বিতীয় বিয়ের ঝড় নামিয়ে ফেলুন। তারপরও যদি করতে চান সেটা ভুল হবে তা বলছি না। তবে আপনাকে উপরের নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে, কৌশলী, ধৈর্যশীল, বিচক্ষণ ও বুদ্ধধিমান হতে হবে।
এই লেখাটির উৎস বই: ব্যক্তিক যৌননীতি
লেখক: মুহাম্মাদ আল-আমিন খান
প্রকাশক: সনেট লাইব্রেরি
সার্চ কী: বহুবিবাহ বৈধতা ইসলাম, একাধিক বিয়ের বিধান কুরআন হাদীস, ইসলামিক দৃষ্টিতে
বহুবিবাহ, মুসলিম পুরুষ একাধিক স্ত্রী, ইসলামে একাধিক স্ত্রী নেওয়ার কারণ, ইসলাম ধর্মে
বহুবিবাহ কতটুকু বৈধ, বহুবিবাহ হালাল নাকি হারাম, চার বিয়ে ইসলামে, একাধিক বিয়ে কবে বৈধ, বিয়ে ইসলামী বিধান, ইসলামিক বিয়ের নিয়ম, বহুবিবাহ আইনি বৈধতা বাংলাদেশ, মুসলিম বিবাহ আইন,
ইসলামী শরীয়ত ও বিয়ে, মুসলিম পারিবারিক আইন
বহুবিবাহ, ইসলাম ধর্ম ও বিবাহ, একাধিক
বিয়ের ইসলামিক ব্যাখ্যা
ঘোষণা: এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সকল লেখনি লেখক ও ওয়েব এডমিন মুহাম্মাদ আল-আমিন খান কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Bangla
Sex Tips এর কোনো লেখনি থেকে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কপি করে
সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্য কোনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো লেখনি ভালো
লাগলে ও প্রয়োজনীয় মনে হলে এই ওয়েবসাইট থেকেই তা পড়তে পারেন অথবা ওয়েব লিংক
শেয়ার করতে পারেন। গুগল সার্চ থেকে দেখা গেছে যে- বহু লেখনি কতিপয় ব্যক্তি নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণরূপে কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। ভবিষ্যতে আবারও এমনটি হলে প্রথমত গুগলের
কাছে রিপোর্ট করা হবে ও দ্বিতীয়ত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কপিরাইট আইনের আওতায়
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সাথে সকলের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে- Bangla
Sex Tips এ প্রকাশিত কোনো লেখনি আপনার ভালো না-ও
লাগতে পারে, প্রয়োজনে আপনি এর সমালোচনা কমেন্টের মাধ্যমে করতে পারেন। বাক স্বাধীনতা, চিন্তার বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার ও লেখালেখি করার অভ্যাসের জায়গা থেকে লেখক যা
ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন। তবে তিনি তার যেকোনো লেখনির ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন যাতে
করে শালীনতা বজায় রাখা যায় এবং অন্যের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা যায়। - মুহাম্মাদ
আল-আমিন খান, লেখক ও ওয়েব এডমিন, Bangla Sex Tips